আমাদের সবার মাঝে থেকে চলে গেলেন একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী
একজন উজ্জ্বল নক্ষত্রের মৃত্যু, আজ ১৪ আগস্ট রাত ৮.৪০ মিনিট এ আমাদের মাঝ থেকে চলে গেলেন দেশবরেণ্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মোফাসসের তাফসীর কারক মরহুম আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী।মৃত্যুর সময় তাহার বয়স ছিল ৮৩ বছর।
তিনি ২০১১ সালে মানবতা যুদ্ধ অপরাধে গ্রেপ্তার হন। ২০১৩ সাল আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করেন। তার জন্ম সাল ছিল ২রা ফেব্রুয়ারি ১৯৪০ সাল।
তিনি কাশেমপুর কারাগারে বন্দি ছিলেন। হঠাৎ বুকের ব্যথা অনুভূত হলে, কারাগারে কর্মরত কর্মকর্তাগণ তেনাকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেন। তেনার অবস্থা ধীরে ধীরে অবনতি হলে, ১৪ই আগস্ট ২০২৩ রাত ৮.৪০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন, ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথম নির্বাচনে জয়ী হন এবং দ্বিতীয়বার ২০০১ সালে নির্বাচনে জয়ী হন।
তাহার জন্মস্থান ছিল ফিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানি গ্রামে। তাহাকে ছোটবেলায় দেলোয়ার সিকদার নামে অনেকে ডাকতো, তিনি বাংলা, উর্দু, ইংরেজি, ফার্সী সহ আরো অনেক ভাষায় তাফসীর পেশ করতেন।
তাফসির পেশ করার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে তেনার বহু খেতাব রয়েছে, সারা বিশ্বের মানুষ এনাকে ভালবাসতেন কারণ তিনি সাবলীল ভাষায় তাফসীর পেশ করতেন। মরহুমের মৃত্যুতে আলেম-ওলামাগণ সহ অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, অনেক দেশ শোক প্রকাশ করেছেন।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৪০ সালে পিরোজপুরের জিয়ানগরের সাঈদখালিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আশির দশকের শুরু থেকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেন, যখন তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ‘ওয়াজ মাহফিল’ নামে পরিচিত ধর্মীয় সমাবেশ গুলোতে বক্তা হিসেবে হাজির হতে শুরু করেন।
সাঈদখালির মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে, জন্মের পর তিনি এলাকায় দেলোয়ার শিকদার নামে পরিচিত ছিলেন। বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের যে ওয়ার্ডটির অধীনে সাঈদখালি গ্রাম, সেই ওয়ার্ডের একজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হারুণুর রশীদ ২০১৩ সালে বিবসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানিয়েছিলেন।
সাঈদী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আল-বদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আল-বদর বাহিনী ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর একটি সহযোগী বাহিনী, যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, নির্যাতন এবং ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। সাঈদীকে ২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, কিন্তু তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।
সাঈদী একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। তার সমর্থকরা তাকে একজন ধর্মীয় নেতা এবং একজন জাতীয় নেতা হিসেবে দেখেন, অন্যদিকে তার বিরোধীরা তাকে একজন যুদ্ধাপরাধী এবং একজন সন্ত্রাসী হিসেবে দেখেন।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৪০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলার সাউদখালি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন ইসলামী বক্তা, লেখক এবং রাজনীতিবিদ। তিনি জামায়াতে ইসলামীর একজন শীর্ষ নেতা এবং বর্তমানে দলের আমির।
সাঈদীর পরিবার শিকদার বংশের। তবে তিনি নিজেকে সাঈদী বলে পরিচয় দেন। তাঁর পরিবারের দাবি, সাঈদী তাঁদের পারিবারিক উপাধি। তবে অনেকে মনে করেন, সাঈদী মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী ছিলেন বলে তিনি নিজের নাম পরিবর্তন করে সাঈদী করেছিলেন।
সাঈদী ১৯৬০ সালে খুলনা আলীয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর তিনি ইসলামী বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন্য পাকিস্তানে যান। ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরে আসেন এবং জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
সাঈদী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতন ও লুটপাটের অভিযোগে অভিযুক্ত। ২০১১ সালে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার হন। ২০১৩ সালে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ ও সহিংসতা চালায়। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ঢাকায় জামায়াতে ইসলামীর একটি মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১৬ জন।
সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও প্রতিবাদ জানায়। তারা সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডকে দ্রুত স্থগিত করার আহ্বান জানায়।
সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনমতও বিভক্ত। অনেকেই মনে করেন, সাঈদী মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী ছিলেন বলে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে অনেকেই মনে করেন, সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত।